মাজহারুল মিচেল: [২] তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) আওতাধীন সরকারের কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট) শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়।

[৩] বিজিডি ই-গভ সার্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান জানান, গত ৩১ জুলাই ভারতের একটি হ্যাকারগোষ্ঠী আক্রমণের হুমকি দিয়ে এ ঘোষণাটি দেয়। এর প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোসহ (সিআইআই) দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যখাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

[৪] ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. কামরুজ্জামান জানান, হ্যাকাররা সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি যে তারা কোন কোন জায়গায় আঘাত করবে। সুতরাং এ হুমকিটি সবার জন্যই প্রযোজ্য। সবাই এর আওতায় থাকবে। এমনকি পেমেন্ট গেটওয়েতেও আঘাত হানতে পারে।

[৫] তিনি বলেন, তবে এ হামলাটা ১৫ আগস্টে অথবা তার আশেপাশের সময়ও হতে পারে। অর্থাৎ আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুত নিতে হবে।

[৬] আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন জানান, হ্যাকাররা সাধারণত কোন বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে দেশে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর জন্য এ আক্রমণগুলো করে থাকে। সামনে আমাদের দেশের বড় একটি দিবস রয়েছে। সেটাকে ঘিরেই তারা এ আক্রমণ করছে।

[৭] এ জন্য বিজিডি ই-গভ সার্টকে সার্বক্ষণিক মনিটর করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

[৮] তিনি বলেন, শুধু সরকারকেই নয় সবাইকেই তাদের জায়গা থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু এ আক্রমণ নয় ভবিষ্যতের যে কোন আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সরকারের বিজিডি ই-গভ সার্টের সনদ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

[৯] এথিক্যাল হ্যাকার কমিউনিটি গ্রুপ অব বাংলাদেশের প্রধান মো. আলামিন শেখ জানান, তারাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ আছেন। সরকার চাইলে তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত আছেন। তিনি জানান, তাদের এ মুহুর্তে প্রায় এক হাজার হ্যাকার রয়েছে।

[১১] কীভাবে হ্যাকাররা আক্রমণ করতে পারে, এর উত্তরে তিনি বলেন, সাধারণত ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনাল-অফ-সার্ভিস (ডিডিওএস) দিয়ে নিম্মমানের সিকিউরিটি পাসওয়ার্ড এবং পেলোড ড্রপ করার জন্য ব্যাকডোর হিসাবে ক্ষতিকারক প্রোগামিং ল্যাংগুয়েজ পিইচপি শেল ব্যবহার করে হ্যাক করে থাকে। তবে হ্যাক হওয়ার পরেই বুঝা যায় যে কিভাবে হ্যাকটা হলো।

[১২] এদিকে, আক্রমণের হমকির ঘটনায় অনেকটাই আতংকে আছেন দেশের প্রায় সকল প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাবসায়িরা।

[১৩] ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, হ্যাকাররা যেসব আক্রমণ করতে পারে সেগুলোকে মাথায় রেখে আমরা আমাদের সকল সদস্যদেরকে জানিয়ে দিয়েছি।

[১৪] তিনি বলেন, হ্যাকারদের প্রথম হাতিয়ার ইন্টরনেট কানেক্টিভিটি হওয়ায় আমরা খুবই সতর্ক অবস্থায় আছি।

[১৫] ই-কমার্স এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ই-কমার্সে প্রচুর আর্থিক লেনদেন হয়। যার ফলে আমরা আমাদের সকল সদস্যদের তাদের সকল ই-কমার্স ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার বলয়কে বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি।

[১৬] উইমেন ই-কমার্স এসোসিয়েশনের ডিরেক্টর ইমামা জ্যোতি জানান, তাদের প্রায় ৩ লাখ এফ কমার্স উদ্যোক্তা খুবই চিন্তায় আছেন।

[১৭] এছাড়াও উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি প্রযুক্তি কর্মকর্তারাও আতংকে আছেন। চিফ টেকনোলজি অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি তপন কান্তি বলেন, দেশের প্রায় সকল ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের আর্থিক লেনদেন করতে নানা নিরাপত্তার টুল বৃদ্ধি করেছে। এমনকি সন্দেহজনক লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই লেনদেনকে আটকে দেয়া হচ্ছে। পরে প্রমাণাদি পেলে ছাড়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

[১৮] এ আক্রমণের মোকাবেলা করতে বিজিডি ই-গভ সার্ট জানায়, ২৪ ঘণ্টা বিশেষ করে অফিস সূচির বাইরের সময়ে নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে নজরদারি এবং কেউ তথ্য সরিয়ে নিচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখার তাদিগ দিয়েছে।  

[১৯] এছাড়াও তারা ইনকামিং এইচটিটিপি/এইচটিটিপিএস ট্রাফিক বিশ্লেষণের জন্য ফায়ারওয়াল স্থাপন এবং ক্ষতিকারক অনুরোধ এবং ট্রাফিক প্যাটার্ন ফিল্টার করতে বলেছেন।  

[২০] তারা বলেন, ডিএনএস, এনটিপি এবং নেটওয়ার্ক মিডলবক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা সুরক্ষিত রাখতে হবে। ব্যবহারকারীদের ইনপুট যাচাই করতে হবে। ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রেখে এসএসএল/টিএলএস এনক্রিপশনসহ এইচটিটিপিএস প্রয়োগও করতে হবে।  

[২১] হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং সন্দেহজনক কোনো কিছু নজরে এলে বিজিডি ই-গভ সার্টকে জানাতে আনুরোধ করা হয়। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব